গত ২২ ডিসেম্বর ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, বিগত বছরের তুলনায় মোটা চালের দাম কেজি প্রতি ৪৭.৬৯ শতাংশ বেড়েছে, তবে মাঝারি চাল ২৩.৩৩ শতাংশ এবং সরু জাতের চাল ১৭.১৪ শতাংশ বেড়েছে।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি মোটা চালের দাম আগের বছরের তুলনায় ৩০-৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪৬-৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে, মাঝারি জাতের দাম ৪০-৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৩-৫৮ টাকা এবং সরু জাতের চাল ৪৫-৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৮-৬৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস: লকডাউন আতঙ্কে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম
তেলের দামও বেড়েছে
মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ঢাকার কাঁচা বাজারগুলোতে প্রতি লিটার তেল ২২.৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
টিসিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী এক লিটার পাম ওয়েল তেলের দাম ৩৫.২৫ শতাংশ এবং সুপার তেল২৭.৬৩ শতাংশ বেড়েছে।
গত বছরের তুলনায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১৮.৬ শতাংশ এবং এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৪.২৯ শতাংশ এবং পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে ১৭.৪৬ শতাংশ।
সবজির দাম বেড়েছে
এদিকে টিসিবির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় আলুর দাম বেড়েছে ৭২.৭৩ শতাংশ, মসুর ডাল (মাঝারি শস্য) বেড়েছে ২১.৪৩ শতাংশ এবং বড়টা ১৭.৩৯ শতাংশ বেড়েছে।
রাজধানীর কাপ্তান বাজার, আনন্দ বাজার, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার এবং সরুলিয়া কাঁচাবাজারসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে ইউএনবির সংবাদদাতা বেশিরভাগ সবজি বেশি দামে বিক্রি হতে দেখেছেন।
সরুলিয়া কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি কেজি টমেটো এখন ১০০-১৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০-১৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৪০-৭০ টাকা, শিম ৪০-৬৫ টাকা, শসা ৪০-৬০ টাকা, পুরনো আলু ৪০-৫০ টাকা এবং নতুন আলু ৫৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
যাত্রাবাড়ির দোকানদার হাসিবুল জানান, তার দোকানে এক কেজি চালের সর্বনিম্ন দাম ৫৫ টাকা। নাজিরশাইলের ছোট জাতের দাম প্রতি কেজি ৬২-৬৮ টাকা।
আরও পড়ুন:ঢাকার বাসিন্দারের শীতেও ঘাম ঝরাচ্ছে সবজির দাম
চালের দাম বৃদ্ধির কোন কারণ নেই: খাদ্যমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘আমরা এক লিটার পাম অয়েল ৯৮ টাকায়, সয়াবিন ১১০ টাকায় এবং সরিষার তেল ১৪০ টাকায় বিক্রি করি। এছাড়া এক কেজি চিনি ৬২-৬৫ টাকায় এবং ময়দা ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি করি।’
‘দাম বৃদ্ধির পিছনে ব্যবসায়ীরা’
ডেমরার বাসিন্দা লুৎফর রহমান জানান, মুদি দোকানের পণ্যের দাম এখন খুব বেশি। তবে শীতকালে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, পেঁপে এবং মূলাসহ কয়েকটি সবজির দাম কমেছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘বেঁচে থাকার জন্য আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করছি। আমরা ক্রয় বন্ধ করতে পারি না, আমরা কেবলমাত্র ক্রয়ের পরিমাণ কমাতে পারি।’
রহমান বলেন, বেআইনি ব্যবসায়ে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বলে মনে হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা কি করতে পারি? যখন দাম বাড়ানো হয়, আমরা ৫ কেজির পরিবর্তে ২ কেজি (পণ্য) কিনে থাকি।’
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ সভাপতি এস এম নাজির হোসেন কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্তার কথা বলছেন।
তিনি বলেন, ‘দাম বাড়ানোর পর ক্রেতারা কিছুই করতে পারে না ব্যবসায়ীরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা তাদের ইচ্ছায় দাম বাড়ায় এবং কমায়। মৌসুমে বাজারে পর্যাপ্ত চাল আসলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।’
নাজির বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও মিলারদের মধ্যে বৈঠকের পর চালের দাম বেড়েছে।
‘যদি আমদানিতে কোনো বিলম্ব হয় তবে ব্যবসায়ীরা সুবিধা গ্রহণ করে। যদি ঘাটতি থাকে তবে সরকার কেন ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করতে বিলম্ব করে?’
‘শিগগরই চালের দাম কমবে’
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাই উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তাহমিদুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের মোট ৭ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে ৫ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ২ লাখ ৭ হাজার মেট্রিক টন গম।
এর আগে খাদ্য মন্ত্রণালয় ভারত-ভিত্তিক রিকা গ্লোবাল ইম্পেক্স লিমিটেডের সাথে ৫০ হাজার মেট্রিক টন সাদা চাল কিনতে একটি চুক্তি করে।
আরও পড়ুন:শীতের সবজিতে সয়লাব নওগাঁর হাট-বাজার
জমজমাট কুমিল্লার সবজি বাজার নিমসার
আমদানি করা ভারতীয় এই চালের দাম প্রতি কেজি ৩৪.২৮ টাকা পড়বে।
ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের বিদ্যমান মজুদ চাল দিয়ে মার্চ পর্যন্ত সরবরাহ করতে পারব’
সরকার ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করছে। ইতোমধ্যে, আমদানির প্রথম চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে, ভারত থেকে সড়ক পথে চাল আনা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি শিগগরই চালের দাম কমে আসবে।’